কুষ্টিয়া থেকে: কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় নদীর চরে অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গড়াই নদীর বাম তীরের হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের শালদাহ মৌজায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীলের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিনসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলির অভিযোগ স্থানীয় কিছু দূর্বৃত্তচক্র মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব গরীব মানুষদের এখানে বসতে দিয়েছে। এবিষয়ে সদর উপজেলা (ভূমি) কমিশনার দবির উদ্দিন বলেন, গৃহহীন বা আশ্রয়হীন মানুষের ঘর করে দিচ্ছে সরকার। তারা চাইলে সরকারের কাছে ঘরের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া কেউ যদি টাকার বিনিময়ে এসব সরকারী জমিতে কাউকে বসিয়ে থাকে সেবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উচ্ছেদ হওয়া গৃহহীন জেসমিন বলেন, ‘আমি বাধের চরে ভাড়া ছিলাম, হঠাৎ দেখি এই চরে টাকার বিনিময়ে জমি দেয়া হচ্ছে ঘরবাড়ি করার জন্য। আমিও স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নেদাই মেম্বারকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ৩কাঠা জমি নিয়ে কিস্তির লোন তুলে এই ঘরটা তুলেছিলাম। এখন আমার সব গেলো। আমি এর বিচার চাই, আমার টাকা ফেরত চাই’। তবে অভিযুক্ত নেদাই মেম্বর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিই নাই, টাকা নিয়েছে ছেলে পেলে’। এছাড়াও শালদাহ গ্রামের সুমন এবং বোয়ালদাহ গ্রামের জাকিরও এই টাকা পয়সা লেনদেনের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী পরিবার গুলির।
উচ্ছেদ হওয়া মানিকের স্ত্রী মেঘলা খাতুনের অভিযোগ, ‘হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জামাই আমলাপাড়ার বাসিন্দা জনি আমার কাছ থেকে ৫৫হাজার টাকা নিয়ে আমাকে আড়াই কাঠা জমি দিয়েছে। আমার টাকা ফেরত চাই সমিতি থেকে লোন করা টাকায় ঘর তুলেছিলাম তার ক্ষতিপূরণ চাই’। অভিযোগ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের জামাই জনি বলেন, ‘এবিষয়ে আমি ফোনে কোন কথা বলতে রাজি নই, আপনার সাথে সাক্ষাতে কথা বলতে চাই’। কখন কথা বলবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সুবিধামতো সময়ে আপনার সাথে কথা বলবো’ এই কথা বলেই ফোন কল কেটে দেন জনি।
উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে উপস্থিত সদর উপজেলার ১নং হাটশ হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মুশতাক হোসেন মাসুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একদল দূর্বৃত্তচক্র লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরকারী এসব জমি বিক্রি করেছে’। যে সব লোকজন এর সাথে জড়িত আছে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তার প্রতিকার চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার দরখাস্ত করেছি প্রশাসনের কাছে’। কিন্তু কোন প্রতিকার পায়নি’।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘সরকারী সম্পত্তিতে অবৈধ দখলমুক্ত করনে উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান উদ্যোগ। আজকেও তার অংশ হিসেবে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে গড়াই নদীর বামতীরে কয়েক‘শ বিঘা সরকারী সম্পত্তিতে অবৈধ ভাবে যারা স্থাপনা ও অবকাঠামো গড়ে তুলেছিলো তাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য ইতোপূর্বেই নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। যারা যায়নি তাদের উচ্ছেদ করা হলো। তবে পরিস্থিতি বুঝে আজকেও সবগুলি উচ্ছেদ করা যায়নি। আগামী ৩দিনের মধ্যে তাদের যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে। তারা চাইলে সরকারের কাছে ঘর চেয়ে আবেদন করতে পারেন। এখানে অভিযোগ উঠেছে কে বা কারা নাকি এসব গরীব মানুষদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে সরকারী জমিতে বসিয়েছে, সেবিষয়ে যদি কেউ সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল, ‘এটা চলমান প্রক্রিয়া। সরকারী সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রাখার কোন সুযোগ নেই’। যারাই এই দখলের সাথে জড়িত থাকনা কেনো তাদের আর যে পরিচয়ই থাকুক তা দেখা হবেনা। আইন সবার জন্যই সমান ভাবে প্রযোজ্য’।